Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
গবাদি প্রাণির সাধারন রোগ বালাই ও তাদের প্রতিষেধক টিকা
বিস্তারিত

গবাদিপশুর রোগবালাই, চিকিৎসা ও প্রতিকার

                             -ডাঃ এ, কে, এম আজহারুল ইসলাম, ভেটেরিনারি সার্জন, বাসাইল,

১। তড়কা রোগ ঃ ব্যাকটেরিয়াজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। রোগের লক্ষণ ঃ ক। আক্রামত্ম প্রাণির দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। খ। দেহের পশম খাড়া হয়ে যায়। শরীর কাঁপতে থাকে, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত ও গভীর হয়ে থাকে। গ। অতি তীব্র রোগের ক্ষেত্রে আক্রামত্ম প্রাণির আকস্মিকভাবে মৃত্যু ঘটে যে চিকিৎসার প্রায় সময়ই পাওয়া যায় না। ঘ। আক্রমনের তীব্রতায় অনেক সময় নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। প্রাণি আসেত্ম আসেত্ম নিসেত্মজ হয়ে শুয়ে পড়ে ও শরীর খিঁচুনি দিয়ে পড়ে মারা যায়। প্রতিকারঃ সুস্থ প্রাণিকে প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। মৃত প্রাণিকে গভীর গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে অথবা আগুনে পোড়াতে হবে। কোনো ক্রমেই প্রাণির চামড়া ছিলা যাবে না। টিকাঃ ৫ মাস বয়সের সুস্থ বাছুরকে। বছরে ১ বার।

 

২। বাদলা রোগঃ ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক রোগ। রোগের লক্ষণঃ ক। অল্প বয়সের গরুতে এ রোগ দেখা যায়। খ। তীব্র রোগে প্রথমে জ্বর হয় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পিছনের অংশের মাংসপেশী ফুলে যায়। গ। ফোলা জায়গায় চাপ দিলে পচ পচ শব্দ হয়। ঘ। আক্রামত্ম অংশ কালচে হয়ে যায় ও পচন ধরে। ঙ। রোগাক্রামত্ম প্রাণি দুর্বল হয়ে মারা যায়। প্রতিকারঃ স্বাস্থ্যসম্মত বিধি-ব্যবস্থার মাধ্যমে এ রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রন করা যায় এবং সুস্থ প্রাণিকে টিকা দিতে হয়। টিকাঃ ৩ মাস বয়সের সুস্থ বাছুর।

৩। গলাফুলাঃ গলাফোলা একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত ছোঁয়াচে ও সংক্রামক রোগ। এটি সাধারনত বর্ষাকালে বেশী হয়। রোগের লক্ষণঃ ক। দেহের তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায় (১০৫-১০৭ফারেনহাইট) খ। গলা ফুলে যায় এবং ফুলা জায়গায় হাত দিলে গরম অনুভূত হয়। গ। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয় ফলে মুখ হা করে জিহবা বের করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। ঘ। জিহবা ফুলে যায় এবং মুখ দিয়ে লালা পড়ে। ঙ। নাক দিয়ে ঘন সাদা কিংবা লালচে শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়। চ। তীব্র প্রকৃতিতে প্রাণি ২৪ ঘন্টার মধ্যে মারা যায়। প্রতিকারঃ আক্রান্ত প্রাণিকে সুস্থ প্রাণি থেকে আলাদা রাখতে হবে। প্রতিটি প্রাণিকে ১ বৎসর পর পর টিকা দিতে হবে। মৃত প্রাণিকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। টিকাঃ অয়েল এডজুভেন্ট টিকাঃ ২ বছরের সুস্থ বাছুর। এলাম অধঃপতিত টিকাঃ ৬ মাসের সুস্থ বাছুর।

 

৪। ক্ষুরা রোগঃ ভাইরাস জনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। রোগের লক্ষণঃ ক। প্রথমাবস্থায় আক্রামত্ম প্রাণির জ্বর হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ - ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। খ। মুখ দিয়ে লালা পড়ে। আক্রান্ত প্রাণি খেতে পারে না, হাটতে পারে না, প্রাণি দুর্বল হয়ে পড়ে। গ। ছোট বাছুর কোন লক্ষণ প্রকাশ না করে মারা যেতে পারে। প্রতিরোধ ও প্রতিকারঃ সু্স্থ অবস্থায় ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হয়। আক্রামত্ম প্রাণিকে আলাদা করে রাখতে হয়। রোগাক্রামত্ম গরুর বাসস্থান জীবাণুনাশক ঔষধ দ্বারা ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে। ক্ষতস্থান জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে। পটাশিয়াম পারমেঙ্গানেট ০.১% ২/৩ বার মুখ ও পা ধুয়ে গ্লিসারিন বা মধুতে বোরিক এসিড মিশিয়ে ক্ষতস্থানে লাগাতে হবে। টিকাঃ ২ মাস বয়সের সুস্থ বাছুরকে। ৬ মাস পর পর টিকা দিতে হবে।

 

৫। ওলান প্রদাহ বা ম্যাষ্টাইটিসঃ ওলান প্রদাহ বা ম্যাষ্টাইটিস দ্ধুগ্ধবতী গাভীর একটি জটিল মারাত্মক রোগ। বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক জীবানু এ রোগের জন্য দায়ী। রোগের লক্ষণঃ ক। ওলান লাল হয়ে ফুলে যায় এবং হাত দ্বারা স্পর্শ করলে গরম অনুভূত হয়। ওলানের ভিতর পূঁজ হয়। খ। দেহের তাপ বেড়ে যায়। গ। দুধ ছানার মত ছাকা ছাকা হয়। দৃধে রক্তাক্ত হলুদ বর্ণের তলানি পড়ে। ঘ। বাঁট ক্রমশ শক্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।

৬। মিল্ক ফিভারঃ সাধারনত বাচ্চা প্রসবের পর এবং বেশী দুধ দেয় এ রকম গাভীর এই রোগ হয়ে থাকে। তবে গর্ভাবস্থার একদম শেষের দিকেও এই রোগ হতে পারে।

কারনঃ সাধারনত গাভীর গর্ভস্থ বাচ্চাতে এবং দুধের সাথে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম চলে যাওয়ার ফলে রক্তে ক্যালসিয়ামের অভাবের কারনে এ রোগের সৃষিট হয়। রোগের লক্ষণঃ ক। ক্ষুধামন্দা, অনুভুতিহীন ও নিদ্রালুভাব থাকে। খ। প্রাণি হাঁটতে চায় না এবং হাঁটতে গেলে এলোমেলোভাবে পা ফেলে। গ। অনেকসময় দাঁড়িয়ে মাথা দোলাতে থাকে। ঘ। জিহবা বের হয়ে আসে এবং মাথা ও পায়ের মাংসপেশী কাঁপতে থাকে। ঙ। শেষের দিকে গাভী বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে এবং মাথা একদিকে বাঁকিয়ে রাখে। চ। চোখের মনি বড় হয়ে যায়। ছ। এক পর্যায়ে গাভী কাত হয়ে শুয়ে পড়ে অচেতন হয়ে যায় এবং পেট ফুলে মারা যায়। রোগের চিকিৎসাঃ আক্রান্ত গাভীকে পর্যাপ্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম দিতে হবে।

 

৭। পি. পি. আর.ঃ বর্তমানে বাংলাদেশে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হল পি পি আর। রোগের লক্ষণঃ ক। রোগের শুরুতে ১০৫-১০৭ফারেনহাইট জ্বর হয়, এর সাথে পাতলাপায়খানা শুরু হয়। খ। ছাগলের নাক দিয়ে শ্লেষ্মা নির্গত হয় এবং নাকে মুখে ঘা হয়। গ। নাসারন্ধ্রের চারদিকে শ্লেষ্মা জমে যায়। ঘ। গর্ভবতী ছাগলের গর্ভপাত ঘটে। প্রতিরোধঃ রোগ হওযার পূর্বে সুস্থ ছাগলকে এ রোগের টিকা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করাই  সবচেয়ে উত্তম। টিকাঃ সুস্থ ২/৩ মাসের ছাগলের বাচ্চাকে।    

ডাউনলোড